মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০

অভিশপ্ত রুম - ভুতের গল্প

পালিয়ে বিয়ে করেছি এই তো এক বছর হয়েছে। নিশি কে নিয়ে ঢাকায় চলে যাই। তারপর সেখানে আমাদের নতুন জীবন শুরু হয়, এক বছর হয়ে গেলেও মেনে নেয় নি কোন পরিবার। দুই জন পরিবারের থেকে দুরে থেকেও ভালো না থেকে ভালো ছিলাম। পরিবারের মেম্বার রা জানে না তাদের কে কত টা মিস করি, তবুও আমরা আশায় থাকি একদিন পরিবার আমাদের মেনে নিবে।  

এই এক বছরে রুপা কে নিয়ে কত সমস্যা কাটাতে হয়েছে,কষ্ট হলেও কিছু করার ছিলো না। তবে চাকরী করাতে যেই স্যালারি পাই তাতে হয়ে যায় আমাদের। 
এক বছর পূর্ন হবার এক মাস থেকে রুপা আমাকে বলে আসছে এক বছর উপলক্ষে তাকে ট্রিট দিতে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম তারপর বলল, যে কোথাও ঘুরতে নিতে। তখন আমি ঠিক করলাম যে রুপা কে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যাবো। নিজে গেলেও রুপা যায় নি কখনো। অন্যদিকে তার ইচ্ছেও আছে কক্সবাজার যাওয়ার। এক বছর একদিনের দিন সকাল বেলা রওনা দিলাম এসি বাসে করে। সকাল ৮ টায় বাস ছাড়লে আমরা কক্সবাজার পৌছায় ১৪ ঘন্টার মধ্যে। রাত হয়ে গেছে,আগে দুই তিন বার আসায় কিছু কিছু টা চেনা আছে। রাতে সরাসরি হোটেলে গেলাম, এক টা রুম নিলাম। রুমে ডুকে রুপা আমার দিকে কেমন করে জেনো তাকিয়ে আছে, তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম,
উফফ আমার নাম তো বলা হয় নি। আমার নাম রিমন,  তো রুপা কে জিজ্ঞেস করলাম,

রিমন - কী হলো? কী দেখছো?
রুপা - আমার না কেমন যেন লাগে
রুপা - অদ্ভুত..
রিমন -   খুলে বলো,
রুপা - ভয় লাগছে রুম টা তে... 
রিমন - আমি আছি না?
রুপা - জ্বী...

আমি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ফ্রেশ হয়েছি, জামা খুলে একটা টি-শার্ট পরেছি।  আমি বউয়ের কথার কেমন গুরুত্ব না দিলেও এক টা বিষয় লক্ষ করেছে। আমি ফ্রেশ হতে গেলাম,এসে জামা চেঞ্জ করলাম,বিছানায় বসেছি। কিন্তু রুপা প্রতি মূহৃর্তে  আমার পিছু পিছু ছিলো। আমি দেখলাম বউয়ের আচরন বদলে যাচ্ছে,  তাই বিছানায় ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বউকে  শুয়ে থাকতে বললাম। 
রুপা আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে। যেন কেউ তাকে নিয়ে যাবে,রিমন কিন্তু তার এসব লক্ষ করছে।

রিমন - রুপা...
রুপা - জ্বী বলেন...
রিমন - কিসের জন্য ভয় করে?  খুলে বলো..
রুপা - জানি না তো, তাকালে   যেন চোখের সামনে কী একটা হাসে।
রিমন - পাগলী, তুমি ভয় পাও তাই এসব অনুভব করো।কই আমি তো দেখি না, আর আমি থাকলেও ভয় পাও?
রুপা - তাহলে কেন ধরেছি আপনাকে?
রিমন - দেখি আমি বাইরে যাবো, খাবার আনতে হবে
রুপা - না যাবেন না, গেলে আমি যাবো আপনার সাথে!

আমি তার অবস্থা দেখে কথা না বলে তাকে নিয়ে খাবারের জন্য গেলাম। রুম থেকে বের হতেই যেন রুপার স্বস্তি ফিরলো। এখন রুপা স্বাভাবিক হয়েছে,আমি তো অভাক, তারপর রুপার হাত ধরে বের হয়েছি। 
রুমে খাবার নিয়ে  আসলে ঝামেলা লাগবে, রুপা এমনি ভয় পাচ্ছে। তাই খেয়ে নিয়ে তারপর রুমে গেলাম, দরজা খুলতেই।  রুপার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। রুপা পা বাড়াতে যেন কষ্ট হচ্ছে, লক্ষ করেছি রুপা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে একটু ধাক্কা দিয়ে বললাম,

রিমন - কী হয়েছে? প্রব্লেম কী? রুমে কী আছে?
রুপা - জানি না, আপনি রুম এটা চেঞ্জ করেন।আমি পারবো না থাকতে এখানে,

কিছু না বলে চলে গেলাম ম্যানেজারের কাছে,কিন্তু লাভ হলো না, যাই হোক রুপা কে ধমক দিয়ে রুমে নিয়ে আসলাম। রুপা যেন কান্না করছে, রুপা কে কখনো বকা বা ধমক দিলে সারাদিন ভর কান্না করতে থাকবে এটা যেন তার অভ্যাস হয়ে গেছে। রুমে এসে দেখলাম সত্যিই কান্না করছে, তখন বললাম,

রিমন - আজব মেয়ে আমি তোমার সাথে তারপর কিসের ভয়?

রুপা কিছু বললো না, এসব দেখে তো রাগ হচ্ছে বটে। কিন্তু তার কান্না দেখলে আমার রাগ যেন কোথায় যায় বুঝতে পারি না। আমি রুপা কে ধরে চোখ মুছে দিয়ে শুয়ে পড়তে বললাম, বকা দেওয়ার জন্য সরি বলেছি। তাকে শুয়ে দিয়ে আমিও শুয়ে পড়বো তার আগে রুপা বললো লাইট যেন অফ না করি।তারপর আমি শুয়েছি,এবার রুপা এসে আমার হাতের উপর শুয়ে আমাকে ধরে  রেখেছে।আমিও তাকে নিজের দিকে টেনে ধরে রাখছি,এরপরই যা হলো..

গল্প - অভিশপ্ত রুম
পর্ব - ১
লেখক - হাসিবুর রহমান
প্রকাশ - ২০/০৫/২০২০

শেয়ার করুন