রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০

অভিমানী | রোমান্টিক বউয়ের গল্প

পালিয়ে বিয়ে করার একদেড় বছর হয়ে গেলো, সেই থেকে ফ্যামিলির কারো সাথে যোগাযোগ নেই।অন্য দিকে মিষ্টির বাবা কেউ নেই, সজল বাসায় সন্ধা আসলো তখন মিষ্টি বললো,

- চলেন না আমরা গ্রামের বাড়িতে চলে যাই।
- তোমার মনে চাইলে যাও,সব সময় কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবে না।
- কী হবে গেলে? আমার এখানে ভালো লাগে না,
- কার কাছে যাবে গ্রামে?
- আপনার মা বাবা,তারা কী এখনো রেগে থাকবে আপনার উপর?
- শুনো যত দিন তারা যেতে না বলবে, একবারের জন্যও ফোন দিবো না। প্রথম প্রথম অনেক চেষ্টা করেও যেহেতু আমার সাথে কথা বলে নি,সো আমার দরকার নেই, এক বছর থাকতে পেরেছি আরো পারবো।
- আমি পারবো না, আপনি আমাকে নিয়ে যান
- তো যাও, এখানে ভালো না লাগলে নিজের অ্যান্টির কাছে চলে যাও।

সজল কথা টা বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। মিষ্টি সজলের কথা গুলো তে কিছু টা আঘাত পেয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে যায়। তখন কী বসে বসে আজে বাজে চিন্তায় মগ্ন আর বসে বসে গুনগুন করে কান্না করছে।
সজল দেখেও চলে গেলো,মিষ্টির কান্নায় সজলের বিন্দু মাত্র কিছু যায় আসে না। বিয়ের ১ বছর ভালোবেসে বিয়ে করেছে,শহরে চাকরী করতো সজল। বাবা-মা হীন প্রেমিকা ছিলো গ্রামে চাচা-চাচীর কাছে।
চাচীর ব্যবহার ১৪ বছর থেকে ১৮ বছর অর্থাৎ চার বছর সহ্য করেছে।আর করতে না পেরে সজল কে বললে সজল মা বাবা কে জানায় কারো মাধ্যমে।  তারপর মা বাবা অস্বীকৃতি জানালে,নিজেই মা বাবা কে জানায়। মা প্রখমে সরাসরি না বলে দেয় বাবা কে বললে মা কোন গুরুত্ব দেয় নি। তাই এক মাসের মধ্যে মিষ্টি নিয়ে চলে যায় ব্যস্ত শহরে। সেখানেই বিয়ে করে নেয় দুইজন, বন্ধুদের কাছে থেকে সহযোগী পায় সব সময়। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন ঠিক আছে দুইজন,বেশ ভালো।
কিন্তু মিষ্টি ইদানীং গ্রামে ফিরে যেতে চায়, তার এখানে ভালো লাগে না,সারাদিন বাসায় একা থাকতে যেই কারো ভালো লাগবে না তেমনি মিষ্টির কাছেও ভালো লাগে না। সজল বাসায় আসার পর খেয়ে একটু বসল,তখন মিষ্টি এসব বলতেই রেগে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, মিষ্টি কান্না করতে থাকে বসে বসে।

সজল বাসায় ফিরে দেখে দরজা টা যেভাবে রেখে গেছে সেভাবেই আছে, বিতরে এসে দেখে যেভাবে বসে থাকতে দেখে গেছে সেভাবে বসে আছে। দেয়ালের সাথে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, কান্না করার পানি মুখে শুকিয়ে গেছে। সজল গিয়ে ভেজা কাপড় এনে মুখ মুছে দিয়েছে।
ভেজা কাপড়ের ঠান্ডার উষ্ণতা পেয়ে চোখ খুলে গেলো,সামনে হাসবেন্ড কে দেখে তাকিয়ে আছে।  সজল মুখ  ভালো ভাবে মুছে দিয়ে বিচানায় নিয়ে গেলো,

- আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো, তুমি এই ১ বছরে এমন একটা দিন বলো যেই দিন কান্না করা ছাড়া ছিলে।
- আগে আমাকে ঘুম পারিয়ে দিবেন, ঘুম পাচ্ছে,
- আমি যে চলে গেছি দরজা টা লাগাও নি, কেউ যদি এসে ফোন নিয়ে যেতো তখন কী হতো?
- আর ফোন চালাতাম না তখন,
- ঠিক আছে তোমাকে তোমার অ্যান্টির (চাচী) কাছে দিয়ে আসবো।

সজলের মুখ থেকে কথা টা শুনার পর আবার সহজ সরল ভাবে হাসবেন্ড এর দিকে তাকিয়ে আছে।

- কী হয়েছে?
- আপনি আমাকে মেরে ফেলে দিন,তবুও যাবো না ওখানে।
- তাহলে নিজে কে একটু পরিবর্তন করো...
- আব্বু-আম্মু কে মনে পড়ে খুব, ইচ্ছে হয় চলে যেতে আব্বু-আম্মুর কাছে।
- ৪,৫ বছর হয়ে গেলো,আর কান্না করলে কী আল্লাহ তাদের ফিরিয়ে দিবে?
- একা একা থাকলে তো মনে পড়ে, একটা বেবি এনে দিন আর কান্না করবো না হিহিহি

সজল, বউয়ের কথায় একটা হাসি দিয়ে,পাশে শুয়ে পড়তে বলে। তখন ফোন আসলো, সজল উঠে ছাদের দিকে গেলো। মিষ্টি উঠে পিছু নিলো, বরের কথা শুনতে উঠে গিয়ে লুকিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফোন দিয়েছে সজল এর বোন, বোনের সাথে মাঝে মাঝে কন্টাক্ট হয় মা-বাবার আড়ালে। সজল কথা বলছে মিষ্টি দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে,যখন কথা শেষ হলো মিষ্টি বের হলো,সজল দেখে চমকে উঠে,

- তোমাকে না ঘুমাতে রেখে এসেছি
- আপনি কার সাথে লুকিয়ে কথা বলবেন, আমি ঘুমাবো তা হবে না।
- আরে মিম ফোন দিয়েছে,
- শুনেছি আমি!

সজল কিছু না বুঝার মতো করে থেকে, রুমে আসলো।আবারো ফোন আসলো,তখন অফিস থেকে ফোন দিয়ে বলেছে যেন তাড়াতাড়ি আসে সকালে।

তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে, নাস্তা না খেয়ে চলে গেলো, গিয়ে বাসায় ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে মিষ্টি খেয়েছে কিনা,কিন্তু সে খায় নি কারন তার একা একা খেতে ভালো লাগে না।
বকাঝকা করার পর খেয়ে নিয়েছে, প্রতিদিন এমন করবে। যখন একা থাকবে নিজের যা ইচ্ছে তাই করবে , ভালো কী খারাপ কিছুই না ভেবে নিজের মতো করে  চলবে।

সজল বাজার করতে গেলো, সব সময় শুক্রবার সকালে প্রথমে ঘুম থেকে উঠে বাজার করতে যাবে। বাজার থেকে এসে দেখে মিষ্টি বসে বসে চোখ ডলছে, এক চোখ লাল হয়ে গেছে কিছু টা।সজল এসে হাতের সদাই রেখে মিষ্টির কাছে বসলো,
লেখক - হাসিবুর রহমান

- কী হয়েছে?
- যন্ত্রনা করছে,কষ্ট হচ্ছে!
- কী করেছো এখন?
- আপনি গেছিলেন যে তারপর থেকে..
- আচ্ছা বিকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো!এখন একটু ঘুমাও,
- আপনি খাবেন না? আগে নাস্তা বানাবো..
- আপনি আগে ঘুমান,
- জ্বী না, আপনি এখন এখানে আছেন তাহলে সব কিছু করতে পারবো, আপনি না থাকলে যন্ত্রনা বেশি হয়!

সজল হাসলো, আর ভাবতে থাকি মেয়ে টি এমন কেন! সারাক্ষণ সজল কে পাশে চায়। সজলের অনুপস্থিতে মিষ্টির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কখনো বসে বসে কান্না করবে, কখনো চোখের যন্ত্রনা, কখনো পেটে ব্যাথা।
সজল না থাকায় বাসায় সারাক্ষণ একা থাকে, আর হাজরো কথা ভাবে, হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে থাকে, প্রচুর টেনশন করে, বাবা মায়ের কথা মনে করে কষ্ট পায় । যার জন্য তার বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, কখনো সজল বউয়ের দেওয়া নির্ধারিত টাইমে না আসলে কিংবা একটু দেরি হলে তো হয়েছে,
মুখ দিয়ে যা আসবে সব বলবে, যেমন, আমি মরে গেলে ভালো হয়, কেউ আমাকে ভালোবাসে না, আমি একা থাকলে কারো কিছু আসে যায় না, আমার কষ্ট কেউ বুঝে না, আমি ঘুমের ওষুধ খাবো,  ইত্যাদি কথা বলবে,
এরপর..

ওয়েট ফর নেক্স পাট।

গল্প- অভিমানী
পর্ব - প্রথম
লেখক- হাসিবুর রহমান


শেয়ার করুন