বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

ছোঁয়া | জান্নাতের শর্ত গুলো পূর করলো তার বর

জান্নাত আর শুভ দুই জনের ফ্যামিলির সিদ্ধান্তে বিয়ে ঠিক হয়েছে,দুই জনেই মত দিয়ে, কিন্তু ফ্যামিলির মুখে হাসি দেখার জন্য জান্নাত হ্যাঁ বললেও মনে হলো অন্য টা,অন্য দিকে শুভ জান্নাত কে দেখে মনে হলো যে শুভ যেমন চায় ঠিক তেমনই মেয়ে জান্নাত, যেটা মুখের দিকে তাকালে বুঝা যায়, এক কথায় শুভর স্বপ্নের রানী,তাই ভেবে নিয়েছে জান্নাত কে ই বিয়ে করবে। বিয়ে ঠিক হওয়ার একদিন পর পরই শুভ কে ফোন দেয় জান্নাত,

- হ্যালো,
- এবার বলো কী এমন জরুরি কথা....
- আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
- কেন?
- আমি আগে এসএসসি পরীক্ষা দিবো, আমি আরো পড়তে চাই, আমি তো এখন খুব ছোট মেয়ে তাহলে ছোট মেয়ে কে কেন বিয়ে করবেন শুনি!!
- ছোট হলে কী হবে পাকনা কথা তো জানো।
- সত্যি বলছি আমি বিয়ে করতে পারবো না আব্বু জোর করে দিচ্ছে।
- আচ্ছা কত টুকু পর্যন্ত পড়তে চাও?
- আমি নিজের পায়ে দাড়াতে চাই..
- তোমান পায়ে দাড়ানোর জন্য আমি আছি, বলো যে কত টুকু পড়বে?
- অনার্স পর্যন্ত পড়তে চাই!
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি পড়াবো
- না আমি পারবো না বিয়ে করতে।
- আচ্ছা কী চাও সেটা বলো শুধু
- আমি চাই আমি বিয়ে করবো না, আপনি ভেঙ্গে দিন।
- বিয়ে তো হবেই,
- তবে আপনি আমার অনুমিত ছাড়া ছুতে পাড়বেন না।কিছু করতে পারবেন না,
- আচ্ছা ডান, বাকি টা বলো..
- পড়া-লেখা শেষ করার আগে আপনি আমার সাথে কিছু করতে পারবেন না।
- এই শেষ চাওয়া?
- জ্বী, আর একটু একটু ভালোবাসতে হবে
- সেটা কীভাবে?
- রোজ একটা চুমু খাবেন তাহলে হবে।
- আচ্ছা আর কিছু থাকলে বলো।
- জ্বী না আর কিছু নেই
- আচ্ছা তাহলে রেখে দেও ফোন!
লেখকঃহাসিবুর রহমান

শুভ ফোন টা কেটে দিলো নিজে, শুভ পরিবারের বড় সন্তান। ছোট ভাই আছে, বাবা ব্যাংকার, ছোট ভাই পড়া-লেখা আর মা সারাদিন বাড়িতে একা,যতক্ষণ না ছোট ভাই না আসে।শুভর বয়স তেমন বেশি না, ২২-২৩ হবে, কোম্পানিতে চাকরী করে। শহরে থাকে, বাবার বন্ধুর মেয়ে কে শুভর মায়ের ভালো লাগে তা সবাই কে জানায়। তখন জান্নাতের বয়স ১৮ ছুই ছুই, কয়েক মাস পর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। কিন্তু বাবা চায় বিয়ে দিতে এরপর পরীক্ষা দিবে যদিও পড়া-লেখা খরচের কোন সমস্যা হয় না,কিন্তু জান্নাত তা মোটেও চায় না আগে পড়তে চায়।
সে জন্য শুভ কে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় নিজের শর্ত,শুভ মেনে নেয়। শুভ সোজা- সিদে প্রকৃতির ছেলে, সব সময় বোকাসোকা ভাব নিয়ে থাকে। তাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার এক মাসের মধ্যে ধুমধাম করে বিয়ে হয়।
প্রথম রাতে ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে ডুকলো শুভ রাত তখন সাড়ে ১১ টা পেরিয়ে গেছে। জান্নাত লাল শাড়ী টা পরে চুপ করে বসে আছে খাটের মাঝখানে।শুভ গিয়ে পাশে বসলো,
- আপনি এতো দেরি করে আসলেন কেন? এখন কী ঘুমানোর সময়?
- এখন কী মানুষ ঘুমাবে?
- শুনেন একদম পচা কথা বলার চেষ্টা করবেন না।
- ওমা পচা কথা কোথায় বললাম, আমরা চাইলে আজ রাত গল্প করে কাটাতে পারি।
- জ্বী তাই বলেন,কিন্তু আমার যদি ঘুম এসে যায়।
- তো ঘুমাবে
- আচ্ছা

যেমন কথা তেমন কাজ, দুইটা বালিশ দুইজন দু'টায় মাথায় দিয়ে শুয়েছে।শুভ লক্ষ করলো, জান্নাত ক্রমে ক্রমে দুরে থাকার চেষ্টা করছে।সুন্দর ভাবে কথা বলছে নিজের না বলা কথা গুলো শুভ কে বলছে শুভ শুনছে,বলার মাঝে শুভ বলতে শুরু করলো, বলার মাঝে হঠাৎ দেখলো জান্নাত ঘুমিয়ে পড়েছে। শুভ বুঝতে পারলো কখন? যখন শুভর গায়ে  জান্নাত হাত দেয়,নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুভ দেখলো,এবং বুঝলো সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে।শুভ নিজে কে একটু দুরে সরে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো, চার দিকে আযানের শব্দে যখন শুভর চোখ খুলে যায়। তখন চমকে যাবার মতো ঘটনা ঘটলো, দেখলো জান্নাত তাকে একহাত দিয়ে শক্ত ভাবে জরিয়ে ধরে আছে। শুভ খানিক টা হাসি দিয়ে নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো,বাহিরে না গিয়ে রুমের মধ্যে নামাজ পড়ে নিয়েছে।তারপর জান্নাত কে ডাকতে লাগলো কিন্তু ব্যর্থ হলো জান্নাত উঠলোই না উল্টো শুভর হাত জরিয়ে ধরে ঘুমে মধ্যে।।শুভ জোর না করে পাশে শুয়ে পড়লো।
জান্নাত আগের মতো করে শুভর গায়ের মধ্যে নিজের হাত এলিয়ে দেয়।

বিয়ের ৬-৭ দিন পর জান্নাত বাবার বাড়ি যাবে, তখন শুভ নিয়ে যায়। আবার বিকালে চলে আসবে বলে জেদ করে তখন শুভ নিয়ে আসে! আসার সময় জান্নাত নিজের পড়া-লেখার সমস্ত জিনিস পত্র নিয়েছে।
নিজের বাবার উপর অনেক টা ক্ষোভ জান্নাতের,  কারন সে বিয়ে করতে চায় নি, বাবার বাড়ি গেলো ও খায় নি ঠিক মতো। বাড়িতে এসে শুভ কে জিজ্ঞাস করে তারপর রুমের টেবিলে সব কিছু সাজিয়ে রাখে।

ধীরে ধীরে চলে আসলো জান্নাতের পরীক্ষা বিয়ে দেড় মাস হয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না।
জান্নাতের কথা মতো শুভ  কখনো জান্নাত কে ইচ্ছে করে ছুয়ে দেখে নি। বরং জান্নাত শুভর গায়ে পড়ে ঘুমানো,  মাঝে মাঝে জরিয়ে ধরে,ইত্যাদি। কিন্তু শুভ কে ধরতে নিষেধ করেছে। তাই জান্নাতের ইচ্ছে যেমন তেমনি চলে দিন-প্রতিদিন!!
পরীক্ষার আগের দিন, সন্ধা থেকে ষুভ জন্নাতের সাথে, জন্নাত পড়ছে না, তার ভালো লাগে না পড়তে,পরীক্ষা দিবে না।
তাকে এই সন্ধা বেলা ঘুরতে নেওয়ার জন্য বাহানা ধরলো,অথচ কাল পরীক্ষা, শুভ বকে দেওয়ার পর মুখ টা গোমরা করে বসলো। শুভর সব সময় একটা কিছু ভালো লাগে জান্নাতের গাল গুলো, সব সময় লাল হয়ে থাকে। জান্নাতের পাশে থাকলে আনমনে  তাকিয়ে থাকে। কিন্তু ধরতে পারে না, যদিও জান্নাত কিছু বলবে না ধরলে কিন্তু শুভ বলেছে জান্নাত যেমন চায় তেমন করবে,তাই চাইলেও পারছে না!!
জান্নাত আবার শুয়ে পড়লো, শুভ জান্নাত কে রেগে  "তুমি শুয়ে থাকো" বলে উঠে যাবে।তখন জান্নাত এসে হাত ধরলো,

- ওহুহু আপনি চলে গেলে আমার ভালো লাগবে না তো
- তো পড়তে বসো ঠিক মতো
- না আপনার সাথে গল্প করতে তো ভালো লাগে, গল্প করবো।
- কাল এক্সাম শেষে করবো পুরো দিন
- পারবো না আমি, আপনি কোথাও যাবেন না,আমি তো ভালো ভাবে পরীক্ষা দিবো

দিনের পর দিন জান্নাত এমনি করে যাচ্ছে, নিজে যা বলবে তাই হবে। এই নিয়ে শুভর কোন প্রকার অভিযোগে নেই,কারন জান্নাতের পাগলামি তার কাছে ভালো লাগে আবার রাগ হয় তা প্রকাশ করে না, যদি তার মন খারাপ হয়ে যায়।
জান্নাত ক্রমে ক্রমে শুভর ভালোবাসা পেয়ে নিজে কে সুখি মানুুষ টি মনে করছে। শুধু শরীর স্পর্শ করলে ভালোবাসা হয় তা ঠিক নয়, ভালোবাসা শরীর কে না মন কে খোজে। জান্নাতের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো, এরপর থেকে শুভ সকালে বাসা থেকে বের হতে গেলো তাকে অনেক রকম বুঝিয়ে শুনিয়ে বের হতে হয়,নয় তো বের জতে দেয় না,জান্নাত চায় বর তার পাশে সারাক্ষণ থাকুক। কিন্তু সারাক্ষণ যদি বাসায় জান্নাত কে সময় দেয় তাহলে ফ্যামিলিতে সমস্যা দেখা দিবে,চাকরী চলে যাবে। সব কিছু ভাবতে হয় শুভ কে এরপর যতটুকু সময় থাকে। ততটুকু সময় জান্নাত কে দেয়, ফ্রী সময়ে বাসায় থাকে,বাহিরে বা দোকানে আড্ডা জমাতে যায় না।প্রতি শুক্রবার জান্নাত কে ঘুরতে নিয়ে যায়, জান্নাতের শর্তের মধ্যে এটাও আছে তাকে ঘুরাতে নিতে হবে প্রতি সপ্তাহ একবার করে। যেমন শর্ত তেমন কাজ, তাই প্রতি শুক্রবার ঘুরতে বের হতে হয়।

পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো,জান্নাতের রেজাল্টে সবাই হ্যাপি হলেও সে নিজে হ্যাপি না, আরে ভালো রেজাল্টেে আশায় ছিলো সে,  পরিবারের সবাই তাকে উৎহ দিচ্ছে। কিন্তু তার মন খারাপ, যেখানে ৫ পয়েন্ট এর আশায় ছিলো সেখানে পেয়েছে ৪.৫৫ পয়েন্ট, সে জন্য মন খারাপ।
প্রথমে ভেবেছে শুভ রাগ করবে কম পাওয়ার জন্য, তাই প্রথম প্রথম শুভর থেকে দুরে সরে থাকলো,শুভ তা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো-

- তোমার প্রব্লেম কোথায়?
- কিছু না তো,
- তো আজ এমন কেন সারাদিন?
- কিছু না,
- বাবার বাড়ি যাবে?
- জ্বী....

শুভ কথা টা বলে চলে গেলো, আসরের আযানের সময় শুভ বাসায় আসলো, জান্নাত কে রেডি হতে বললো,নিজে গেলো গোসল করতে। গোসল করে এসে দেখে জান্নাত বসে আছে শুভ রেগে বলল,' আজব মেয়ে তো কী বলেছি তোমাকে?'
জান্নাত বোকা বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,' গোসল করবো আমি'

- সারাদিন কী করছো?
- আপনি কোথায় চলে গেছিলেন...
- তাড়াতাড়ি যাও সন্ধা হয়ে যাচ্ছে,
- আচ্ছা,

শুভ জামা পড়তে পড়তে জান্নাত বের হয়ে আসলো, আর নিজের শাড়ী বের করে সাথে শুভর শার্ট, এসে শুভর গায়ের টা এক প্রকার জোর করে খুলে নিয়ে শুভ কে নিজের পছন্দের টা পরিয়ে দিলো, নিজে শাড়ী পরে নিয়েছে, বোরকা পরে বলল, "হয়েছে তো।
- ফোন নেও,আর তোমার আম্মুকে বলছো?
- আচ্ছা মা কে বলে নেও,

কাল আবার চলে আসবে বলে বের হয়েছে, গাড়ির মধ্যে একটা কথাও বলে নি জান্নাত, শুধু শুভর গায়ের মধ্যে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। শুভ বিভিন্ন কথা বলছে জান্নাত হ্যাঁ, না ছাড়া বাড়তি কোন কথা বলছে না।
দোকানে গেলো সেখানেও কোন কথা বললো না,শুভর কাছে বিরক্তিকর লাগলো জান্নাতের আজকের দিন টি।
এরপর গেলো জান্নাতের আব্বুর বাড়িতে, মা নিজের মেয়ে কে দেখে যেন জান্নাত পেয়েছে। ঠিক জান্নাত ও তেমন মা পেয়ে যেন জান্নাত পেয়েছে, মা সরে যাওয়ার পর শুভ বলল,

- সারাদিন এই জন্য মন খারাপ ছিলো?
- জ্বী না
- তাহলে কী?
- আপনি আমাকে ভালোবাসেন না তাই
- ওমা তাই নাকি, তা সেটা কীভাবে বুঝলে
- কিছু না, জানি না, বলবো না
- আচ্ছা বলতে হবে না, আমার টা আমি করবে।

রাতে যখন ঘুমাতে গেলো, তখনো জান্নাতের মন খারাপ, অন্যান্য দিন শুভর গায়ে পড়ে ঘুমাবে কিন্তু আজ অন্য দিকে, শুভ এবার জান্নাতের গায়ে হাত দিয়ে নিজের দিকে করে নিয়েছে, আজই প্রথম ইচ্ছে করে জান্নাত কে স্পর্শ করে তাকে, নিজের দিকে করে নিয়ে বললো,

- এবার বলো তো কী হয়েছে? আমি কী বলেছি তোমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে?
- তাহলে একবারো আজ চুমু খেয়েছেন? কেন খাবেন আমি তো খারাপ রেজাল্ট করেছি! আমাকে তো একটুও ভালোবাসেন না,তাই তো শুধু দুরে দুরে থাকতে চান। আমি বলেছি আমাকে ভালোবাসতে হবে, আপনি আমাকে ভালোই বাসেন না।
- আচ্ছা এখন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখো
- কেন ধরবো শুনি, আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না,
- ভালো না ভাসলে কী বিয়ে করতাম!
- জানি তো আমি, সব সময় দুরে সরে সরে থাকেন।
- আচ্ছা এদিকে আসো..

জান্নাত কে নিজের সাথে এক করে নিয়ে ধরে রেখেছে, একটু পর জান্নাত ও ধরেছে।
জান্নাতের কথা মতো শুভ রয়েছে কিন্তু এখন আবার জান্নাতের মন খারাপ শুভ দুরে দুরে থাকবে কেন। আসলে জান্নাত প্রথম প্রথম বিয়ে করতে চায় নি, কিন্তু পরে বুঝলো যে ঠিক করেছে বিয়ে করে। শুভ কে শর্ত দিয়েছে ভাবলো শুভ তা মানবে না, নিজে অধিকার খুজবে, পরে দেখলো শুভ কে যেমন ভেবেছে তেমন নয়। প্রথম প্রথম জান্নাত শুভর থেকে দুরে থাকলেও পরে শুভর গায়ে পড়ে থাকে, শুভ যে অন্য দশ টা ছেলে মতো নয় সেটা বুঝেছে  জান্নাত।

কলেজে ভর্তি হওয়ার দিকে জান্নাতের কোন আগ্রহ নেই, সে ভাবে পড়া-লেখার জন্য বর দুরে দুরে থাকে তাই পড়ালেখা করবে না। যখন শুভ চাপ দিলো ভর্তির জন্য, তখন জান্নাত শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে পড়বে না বলে দেয়। মা বাবার সামনে শুভ জানতে চায় কেন পড়বে না,  জান্নাত সবার সামনে বলে দেয়, " আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না, দুরে থাকেন সব সময়, পড়ালেখা না করলে তো ভালোবাসবেন তাই পড়বো না।"

শুভ বাবার মায়ের সামনে কী বলবে বুঝে উঠতে পারে নি, নিজের রুমে যখন জান্নাত আসলো,

- আচ্ছা বাচ্ছামি ছাড়বে না তুমি?
- তাহলে কেন ভালোবাসেন না আমাকে?
- আজব মেয়ে, তুমি তো বললে তোমাকে ছুতে পারবো না, সেইদিনের কথা ভুলে গেছো?
- কখন বলেছি? বললে কী হবে? আমি তো ছোট আমি কী সব বুঝি?
- এখন  বলো ঘুরতে যাবে কোথাও?
- কোথায় যাবেন?
- দুরে কোথায় ৪-৫ দিনের জন্য কোথায় যাবে বলো।
- যাবো না কোথাও অনেক রাত করে রাস্তায় একটু হাটালে হবে!
-  চুপ থাকো! একটা বললে একটা বুঝো,যেটা বলছি যেটা বলো।
- আমি জানি না,আমি কী জানি কোথায় সুন্দর?
- কুয়াকাটা যাবে?
- না কক্সবাজার যাবো
- নাকি সিলেট যাবে?
- আচ্ছা, কখন যাবেন?
- পরের সপ্তাহ

মাঝে মাঝে শুভ অতিরিক্ত রেগে যায়, বউয়ের কাজ দেখে। তবে জান্নাত ইচ্ছে কৃত ভাবে শুভ কে রাগিয়ে দিবে,যেটা শুভ বুঝে উঠতে পারে না। শুভ সরে গেলো জান্নাত কথা গুলো ভেবে হাসবে,  জান্নাত বরের রাগ মাখানো মুখ টা দেখে বেশ মজা পায়।

জান্নাত রান্না ঘরে শাশুড়ির সাথে বসে বসে কথা বলছে, গল্প করছে। শুভ কে আসতে দেখে উঠে পিছনে দিয়ে আসলো,এসে শুভ কে বলল,
- কী হয়েছে?
- গোসল করেছো?
- জ্বী তখন তো করেছি
- আচ্ছা জামা পরিবর্তন করে সেজে নাও তাড়াতাড়ি,
- আজ যাবেন?
- হ্যাঁ!

জান্নাত শাড়ী নামিয়ে সোজা শাশুড়ির রুমে গেলো, পরিয়ে দিতে। 
শাড়ি পরে এসে সাজতে বসলো , তখনি জান্নাতের পেটে ব্যাথা শুরু হলো। জান্নাত সামান্য চিমটি সহ্য করতে পারে না, ব্যাথায় চিতকার দিতেই শুভর আর সাজা কী এসে জান্নাত কে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো,
- জান্নাত কী হয়েছে দেখি তো!
- পেটে পেইন হচ্ছে।
- কেন কী হয়েছে?
- জানি না, ব্যাথা করে,
- কী খেয়েছো তুমি
- কিছু খাই নি তো

মা এসে বললো, আজ কোথাও যেতে হবে না কাউকে। জান্নাত হঠাৎ করে কেন এমন হলো এটা ভেবে শুভ বিস্মিত!!শুভ ভেবেছে অন্য কিছু তাই আর কিছু বললো না সাজগোজ করার পর আর যাওয়া হয় নি ঘুরতে।শুভ জান্নাত কে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তার পাশে শুয়ে বলল, - কী হয়েছে হঠাৎ!"
- আপনি ভালোবাসেন না তাই!
- তুমি আমার মাথা খাবে এটা বলতে বলতে।
- ঠিক তো বলি,কেন ভালোবাসেন না আমায়।
- ব্যাথা করছে এখন?
- একটু একটু করছে।
- আচ্ছা ঘুমাও একটু..
- না সন্ধা আযানের সময় ঘুমাতে নেই!
- আচ্ছা তাহলে আমি বাইরে যাই?
- আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু, না হলে আমার ভালো লাগবে না।

জান্নাত কে নিয়ে শুভর ইচ্ছে ছিলো, দুরে কোথাও ঘুরতে যাবে সেটা আর হলো না।
জান্নাত কে জোর পূর্বক কলেজে ভর্তি করিয়েছে শুভ, গার্লস কলেজে। জান্নাত পড়বে না আর বার বার বলার পরো শুভ শুনছে না, কারন জান্নাতের ইচ্ছে ছিলো পড়া তাই শুভ পড়াবে। কিন্তু জান্নাতের এখন দ্বিমত হয়ে গেলো, তবুও শুভ জোর করলো। কারন হচ্ছে জান্নাত যেন কখনো বলতে না পারে "আপনার জন্য আমার লেখা পড়া নষ্ট হয়েছে।"
দিন দিন জান্নাত বাচ্ছাদের মতো হয়ে যাচ্ছে,অর্থাৎ বাচ্ছাদের স্বভাব তার মাঝে যেন বেড়ে গেছে। শুভ কখনো বিরক্ত হয় নি জান্নাতের প্রতি।
ইদানীং জান্নাত শুভর কাছে বার বার একটা জিনিস আবদার করে যাচ্ছে প্রতিদিন। শুভ দুষ্টামি ভেবে কথা টা দুষ্টামিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে কখনো সিরিয়াস হয় নি। জান্নাতের আবদার হচ্ছে তার একটা, বাবু চাই।  তার কাছে ছোট বাচ্ছাদের ভালো লাগে, এসব বলবে আর শুভর গাল গুলো টেনে টেনে দিবে।
সেদিন ও শুভ প্রতিদিনের মতো বাসায় আসছে, সকালে যাওয়ার সময় জান্নাত কে ঘুমে রেখে গিয়েছে,কারন সেদিন দেরি হয়ে গিয়েছে, অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে দুইজন।
যখন বাসায় আসলো জান্নাত গিয়ে বসে মন খারাপ করে,দিনের বেলায় বরের ফোন রিসিভ করে দিন। শুভ জান্নাতের এসব দেখে মাঝে মাঝে ভাবে, "আসলে কী রোমান্টিক মেয়ে গুলোই খুব রাগী হয়? নাকি রাগী মেয়ে গুলোই রোমান্টিক হয়?"
জান্নাত শুভর হাত থেকে শার্ট নিয়ে রেখে দিয়ে অন্য রুমে যাবে তখন হাত টা ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে জান্নাত কে।
- ছাড়েন আমি ব্যাথা পাচ্ছি
- আরো ব্যাথা দিতে চাই!
- উফফ ছাড়েন না ব্যাথা পাচ্ছি তো।
- এতো রাগ আসে কোথায় থেকে?
- আমি কেন রাগ করবো? আমার সেই অধিকার আছে?
- ওমা, তাই নাকি
- থাকলে আমার কথা শুনতেন, আমি কী চাই তা বুঝতেন।
- সব কিছুই বুঝি, কিন্তু আমি চাই না আমার জন্য তোমার লেখা পড়া নষ্ট হোক,তুমি আগে পড়া শেষ করো তারপর সব কিছু পাবে।
- না আমি করবো না পড়ালেখা! যদি পড়া-লেখা করতে বলেন তবে আমাকে ডির্বোস দিয়ে দেন। আমি আব্বু আম্মুর কাছে থেকে পড়বো।
- আচ্ছা এখন কী চাও সেটা বলো।
- দিবেন তো? তাহলে মাথায় হাত দিয়ে বলেন যে, তুমি যেটা চাইবে সেটা দিবো।
- আচ্ছা তুমি যেটা চাইবে সেটা দিবো,
- আমি চাই আমি আর পড়বো না, আমি আপনার আম্মু কে বাসার সব কাজে হেল্প করবো,আর..
- আর...
- একটা বাবু চাই🥰

কথা টা বলে শুভর মধ্যে নিজের মুখ লুকিয়ে নেয়,শুভ মুখ উঠাতেই দেখে মুখ টা একদম লাল হয়ে আছে।
লজ্জায় জান্নাতের মুখ লাল হয়ে গেছে,তো শুভ বলল,
- এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে? আচ্ছা শুনো,  এতো তাড়াতাড়ি আম্মু হওয়ার ইচ্ছে কেন?একটু পড়ে নিতে পারো তার আগে..
- উফফ আবার, পড়তে পড়তে পড়তে, ভাল্লাগেনা এক কথা।আপনি তো বলেছেন যা চাইবো সেটা দিবেন।
- আচ্ছা বুঝেছি!
-হিহিহি,থ্যাংকস 🥰

যখন বিয়ে হবে তখন জান্নাত বর কে অগ্রীম জানিয়ে দেয় বিয়ে করবে না। আর করলেও শর্ত আছে কিন্তু বিয়ের পর ঠিক থাকলেও কয়েক মাস সম্পূর্ণ বদলে যায়, শুভর মাঝে আসক্ত হয়ে যায়। তখন নিজের দেওয়া শর্তের কথা ভুলেই গেছে,শুভ কে বলেছে যেন শুভ তাকে কখনো স্পর্শ না করে। কিন্তু শুভ তার কথা রাখলেও শুভর ভালোবাসায় জান্নাত নিজের শর্তের কথা ভুলে যায়। যদিও শুভ-জান্নাতের বিয়ের পূর্বে রিলেশন ছিলো না, তবুও শুভ প্রতিদিনের ব্যবহার, জান্নাত বদলে যায় পুরোপুরি।শরীর কে স্পর্শ করলেই শুধু ভালোবাসা হয় না,ভালোবাসা শরীর নয় মন কে খোজে। তাই কাউকে এমন ভাবে ভালোবাসা উচিত যেন,সে নিজ থেকে আপনাতে আসক্ত হয়ে যায়।

         ___সমাপ্ত___
           হাসিবুর রহমান

বিঃদ্রঃ গল্প কপি করা থেকে বিরত থাকুন।

শেয়ার করুন